Health Tips

লিউকোরিয়া শ্বেতপ্রদর সাদাস্রাব হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

#লিউকোরিয়া/#শ্বেতপ্রদর /#সাদাস্রাব
#এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।
নারীর স্বাস্হ্য
মহিলাদের_লিউকোরিয়া_বা_সাদা_স্রাব_কি ?
সাধারণ অর্থে লিউকোরিয়ার বা সাদা স্রাব অর্থ হল যোনির স্বাভাবিক স্রাব। তাতে রক্ত থাকবেনা, সংক্রমন জনিত কারণে কোন কটু গন্ধ থাকবেনা, যোনিপথে বা প্রজনন অঙ্গেঁ কোনও চুলকানি বা অস্বস্তি থাকবেনা। এই স্রাবের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে অন্তর্বাস ভিজে যায় এবং তা শুকালে দাগ লেগে থাকে। এই স্রাব স্বাভাবিক এবং কোন রোগজনিত কারণে নয়- তাই এর জন্য কোনও চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না।
সাদাস্রাব বা শ্বেতপ্রদর
প্রথম কথা হলো শ্বেতস্রাব বা সাদাস্রাব কোন রোগ নয় এবং এটি শরীরের কোন ক্ষতিও করে না। সাধারণত ইহার মাত্রা বা উৎপাত অনেক বেড়ে গেলেই একে রোগের পর্যায়ে ফেলা হয়ে থাকে। প্রধানত মোটা, অলস স্বভাবের, অন্যকোন যৌনরোগ, শারীরিক ত্রুটি, নোংরা অপরিচ্ছন্ন স্বভাব, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের রোগ এবং যাদের স্বামী দূর দেশে থাকেন, এসব মহিলাদের মধ্যে সাদাস্রাবের সমস্যা বেশী দেখা যায়। যদিও সাদাস্রাব বলা হয় কিন্তু ইহার রঙ সাদা, হলদে বা সবুজও হতে পারে। হতে পারে পাতলা অথবা আঠালো। কারো কারো স্রাব এতো ঝাঝালো হয় যে, যোনীমুখে ঘা হয়ে যায়। স্ত্রী বা নারীদের জরায়ুনাড়ি ডিম্বাশয় ওভারি ইত্যাদির রোগের ফলে স্বেতপ্রদর জটিল আকার ধারণ করে। যোনির এই অতিরিক্ত স্বাভাবিক স্রাবের ব্যাপারটা এক এক মহিলার কাছে এক এক রকম। কোনও মহিলা অল্প স্রাবেই মনে করেন এরকম কেন হচ্ছে, এটা তো স্বাভাবিক নয়। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত স্রাবেও নির্বিকার থাকেন। অনেকে মনে করেন লিউকোরিয়ার জন্যই তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত স্বাস্থ্য খারাপ হলে এই স্রাব বাড়তে পারে। কোন কোন মেয়ে ভাবে এটি কি ঠিক কোনও যৌন রোগ বা ক্যানসার? মনে আশঙ্কা নিয়ে তারা চিকিৎসকের কাছে আসে।
লিউকোরিয়ার_কারণ
নারীর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন না কোন সময়ে অতিরিক্ত স্বাভাবিক স্রাব হতে পারে। বয়ঃসন্ধির পর বা নারীর চাইন্ড বেয়ারিং এজ এ অর্থাৎ বাচ্চা হতে পারে এমন বয়সে ১৫ থেকে ৪৪ যোনির দেওয়াল পুরু থাকে। এখানে কোষের স্তর তার শরীরে স্ত্রী হরমোনের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। যোনিতে এক ধরনের ব্যাসিলাই বা জীবানু স্বাভাবিক ভাবে বসবাস করে। এরা যোনির দেওয়াল থেকে ঝরে পড়া কোষের মধ্যকার গ্লাইকোজনকে ল্যাকটিক অ্যাসিড যৌনীর পি.এইচ ঠিকটাক বজায় রাখে এবং এই কারণে মেয়েদের যোনির এক স্বাভাবিক সংরক্ষণ নিরোধক ক্ষমতা থাকে। কোন কোন কন্যাশিশুর জন্মের প্রথম দশদিনে লিউকোরিয়া দেখা দেয়। কারণ মায়ের শরীরে অতিরিক্ত স্ত্রী হরমোন থাকে, তার প্রভাবেই এমন হয়। বয়ঃসন্ধিতে প্রজনন অঙ্গেঁ অর্থাৎ ইউটেরাস, ওভারি ও ভ্যাজাইনায় অতিরিক্ত রক্ত চলাচলের জন্য লিউকোরিয়া হয়। পিরিয়ড শুরু হওয়ার দু’তিন দিন আগে লিউকোরিয়া হতে পারে। তাছাড়া ভিউলেশন বা ডিম্বানু বের হওয়ার সময় সাধারণত পিরিয়ডের ১৪ দিনের মাথায় সাদা স্রাব হওয়ার স্বাভাবিক। যৌন উত্তেজনা বা অতিরিক্ত আবেগেও সাদা স্রাব হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেনের আধিক্যের জন্য লিউকেরিয়া হয়। ডেলিভারির পর দেড় মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত সাদা স্রাব স্বাভাবিক। বয়ঃসন্ধির আগে বা মেনোপজের পর যোনির সংক্রমন রোধের স্বাভাবিক ক্ষমতা কমে যায়। তখন সংক্রমণ হওয়া সহজ। যোনির এই ক্ষরণ-স্বাভাবিক বিবাহিত জীবনের অশান্তি ও মানসিক কারণে সাদাস্রাব বাড়তে পারে। কেচোকৃমিও এ স্রাব বাড়ানোর কারণ হতে পারে। এছাড়া স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে
পোশাক ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে না নিলে। পারিপাশ্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না থাকলে সংক্রমণ হয়ে বেশি স্রাব হওয়া আশ্চর্য নয়।হস্তমৈথুন বা ম্যাস্টারবেশনও এর আর একটি কারণ।
এছাড়াও যোনিতে-ছত্রাক বা পরজীবীর সংক্রমণ হতে পারে।সংক্রমণ হলে চুলকানি থাকবে। ডায়াবেটিস রোগ থাকলে, দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলেও এই সংক্রমনের সম্ভাবনা বাড়ে।
এছাড়াও লিউকোরিয়া আরও কারণ হিসাবে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, টিউবারফিউলোসিস ইত্যাদির জন্য প্রজনন অঙ্গেঁর ইনফেকশন, তলপেটের প্রদাহ, জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়া ইত্যাদিকেও চিহ্নিত করা যেতে পারে।
লিউকোরিয়ার চিকিৎসা ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধের লক্ষণ ভিত্তিক আলোচনা:
পালসেটিলা ( Q, 3x,6,30,200,1M,10M)
গলা শুকিয়ে থাকে কিন্তু কোন পানি পিপাসা থাকে না, ঠান্ডা বাতাস-ঠান্ডা খাবার-ঠান্ডা পানি পছন্দ করে, গরম-আলো-বাতাসহীন বদ্ধ ঘরে রোগীনী বিরক্ত বোধ করে, আবেগ প্রবন, অল্পতেই কেঁদে ফেলে এবং যত দিন যায় ততই মোটা হতে থাকে ইত্যাদি লক্ষণ সমষ্টিসহ সাদা স্রাবের রোগিনীর জন্য পালসেটিলা ভালো কাজ করে।
সিপিয়া (3x,6,30,200)
যে রমনীর নিজ পেশা পরিবারের লোকজনদের প্রতি উদাসীনতা, রোগের গতি শরীরের নীচে থেকে উপরের দিকে, রোগী সবর্দা শীতে কাঁপতে থাকে, পেটের ভিতরে চাকার মতো কিছু একটা নড়াচড়া করছে মনে হওয়া, পাইলস, পায়খানার রাস্তা বা জরায়ু ঝুলে পড়া (prolapse), খাওয়া-দাওয়া ভালো লাগে না, পায়খানার রাস্তা ভারী মনে হয়, মুখের মেছতা , ঘনঘন গর্ভপাত (abortion), যৌনাঙ্গে এবং পায়খানার রাস্তায় ভীষণ চুলকানি, দীর্ঘদিনের পুরনো সর্দি, অল্পতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে, দুধ হজম করতে পারে না, স্বভাবে কৃপন-লোভী, একলা থাকতে ভয় পায়, এই লক্ষণ সমষ্টি রমনীদের জন্য সাদা স্রাবের সমাধান সহ সকল রোগ দুর হবে।
আর্সেনিক এলবম (30,200)
অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত প্রদর স্রাব। স্রাবের পরিমান অধিক।যোনিদ্বার হাজিয়া যায়। জ্বালা করে । সেই জ্বালা গরম পানিতে আরাম বোধ। রোগী অস্হির দুর্বল ও আত্মহত্যার ইচ্ছা ইত্যাদি লক্ষণ বিদ্যমান তাদের জন্য আর্সেনিক এলবম উপকারী।
অশ্বগন্ধা (Q, 3x,30)
শরীর ও মানসিক দুর্বলতা,কোন কাজে মন বসেনা, উদাসীন ভাব। বসা হইতে দাঁড়াইলে মাথা ঘুরে, দর্বলতার জন্য চোখে অন্ধকার দেখে। স্মৃতি শক্তির অভাব। কোন কথা মনে বাখতে পারে না। এই ধাতুর রমনীদের সাদা স্রাবের ইহা উৎকৃষ্ট ঔষধ।
আর্সেনিক আইয়োড (3x,30, 200)
যে রমনীদের প্রদর স্রাব সাদা বা হলুদ যে কোন বর্ণের হোক যেখানে লাগে সেখানেই হাজিয়া যায়, জ্বলে সেই ক্ষেত্রে ঔ রমনীর জন্য আর্সেনিক আইয়োড প্রয়োজন।
ক্যালকেরিয়া কার্ব (30,200)
মোটা থলথলে শারীরিক গঠন, পা সব সময় ঠান্ডা থাকে, শিশুকালে দাঁত উঠতে বা হাঁটা শিখতে দেরী হয় থাকে, শরীরের চাইতে পেট বেশী মোটা,খুব সহজে মোটা হয়ে যায়, প্রস্রাব পায়খানা ঘাম সব কিছু থেকে টক গন্ধ আসে,হাতের তালু মেয়েদের হাতের মতো নরম (মনে হবে হাতে কোন হাড়ই নেই), মাথার ঘামে বালিশ ভিজে যায়, মুখমন্ডল ফোলাফোলা, সিদ্ধ ডিম খেতে খুব পছন্দ করে ইত্যাদি লক্ষণ যে সাদা স্রাবের রোগীর থাকলে ক্যালকেরিয়া কার্ব হবে তার সবচেয়ে উত্তম ঔষধ।
আইয়োডিয়াম (30,200)
প্রচুর খায় কিন্তু তারপরও দিনদিন শুকিয়ে যেতে থাকে, গরম সহ্য করতে পারে না,ক্ষুধা খুব বেশী, দ্রুত হাঁটার অভ্যাস, দৌড়াতে ইচ্ছা হয়, লালাগ্রন্থি ও প্যানক্রিয়াসের রোগ, যে-সব রোগ অমাবশ্যা পূর্ণমায় বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি লক্ষণ যে সাদা স্রাবের রোগীর থাকলে আয়োডিয়াম উপযোগী।
সালফার (30,200,1M)
গোসল করা অপছন্দ করে,গরম লাগে বেশী, শরীরে চুলকানী বেশী, সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, পায়ের তালু-মাথার তালুতে জ্বালাপোড়া, মাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে কোন খেয়াল নাই, ইত্যাদি লক্ষণ যে সাদা স্রাবের রোগীর থাকলে রোগীকে সালফার প্রয়োগ করলে সাদা স্রাব ভালো হবে।
মার্ক সল (30,200)
মার্ক সল ঔষধটির প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় না, ঘামে দুর্গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধ থাকে,কথার বিরোধীতা সহ্য করতে পারে না, ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরে, পায়খানা করার সময় কোথানি, পায়খানা করেও মনে হয় আরো রয়ে গেছে, অধিকাংশ রোগ রাতের বেলা বেড়ে যায়, রোগী ঠান্ডা পানির জন্য পাগল, ঘামের কারণে কাপড়ে হলুদ দাগ পড়ে যায় ইত্যাদি। উপরের লক্ষণ গুলো থাকলে সাদাস্রাবেও মার্ক সল প্রয়োগ করতে পারেন।
চায়না (Q,3x,30,200)
অত্যধিক সাদাস্রাবের কারণে দুর্বলতা দেখা দিলে চায়না খাওয়াতে হবে। চায়নার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো মাথা ভারী ভারী লাগে, চোখের পাওয়ার কমে যায়, অল্পতেই বেহুঁশ হয়ে পড়া, কানের ভেতরে ভো ভো শব্দ হওয়া, মেজাজভীষণ খিটখিটে, আলো-গোলমাল-গন্ধ সহ্য করতে পারে না,হজমশক্তি কমে যাওয়া, পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া ইত্যাদি লক্ষন যে সাদা স্রাবের রোগীর পাওয়া যাবে তার জন্য চায়না উপযোগী।
এলুমিনা ( 3x, 30,200)
গোসল করে আসার সময় স্রাব ভাঙ্গে ডিমের সাদা অংসের মত স্রাব তৎসহ পায়খানা কঠিন এমন রোগীর সাদা স্রাব পীড়ার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এলুমিনা।
এগনাসটাস ক্যাকটাস (Q, 30,200)
যে সকল নারীদের স্বামী সহবাসে ইচ্ছা হয় না বা ভাল লাগে না তাদের যাদুকরি ঔষধ এগনাসটাস ক্যাকটাস।সাদা স্রাব যদি হলুদ হয় এবং অত্যন্ত দুর্বল হয় তবে এই ঔষধ উপযোগী।
বোরাক্স(3x,30,200)
যদি সাদা স্রাব ভাঙ্গার সহিত যোনীতে খুব চুলকানি থাকে তাহলে বোরাক্স উপযোগী তবে যে সকল নারীরা সহজে কাঁদে, মনটা নরম তাদের তলপেটের যাবতীয় পীড়ার মহৌষধ হল পালসেটিলা। যে রমনীর মাথার চুলে জটা বাধে সাদা স্রাবের পরিমান অনেক পা বেয়ে পড়ে, গরম সহ্য হয়না ,সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে অক্ষম সেই রমনীর সাদা স্রাবের চিকিৎসায় অব্যার্থ মহা ঔষধ।
নেট্রাম মিউর (3x,30,200)
আর যে সব নারীরা সান্তনা দিলে আরো রেগে যায়,এবং কাচা লবন ভাতের সহিত সেবন করে তাদের জন্য নেট্রাম মিউর, যে রমনী স্বামীসহবাসে অনিচ্ছা, গরমকাতর, মাসিক কম সেই রমনীর জন্য নেট্রাম মিউর উপযোগী।
বি:দ্র: অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সঠিক ডোজের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সেবন করবেন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিন সুস্থ থাকুন।
Compilation:Dr.Md Habibur Rahman
হেল্পলাইন ০1977 586635

Leave a Reply